আমি অর্না। খুব গাধা টাইপের মেয়ে। গাধা হিসেবে কলেজে খুব সুনাম আছে।এর পিছনের কারনটাও বলছি।
আমি খুবি ভাল। সবসময় মানুষের হেল্প করতে চাই। আর সাহায্য করতে গিয়েই ঝামেলা পাকাই। একদিন বাসায় মেহমান এসেছিল। মা আমাকে কিছু কিনতে পাঠিয়েছিলো।আগেই বলেছি মানুষের উপকার করি। নাচতে নাচতে গেলাম, কিছু দুধ, ডিম আর হাবিজাবি কিছু আনলাম।আগে এটাও বলেছি যে সবসময় ঝামেলা পাকাই। এবারো তার ব্যতিক্রম হল না। এত তাড়াহুড়ো তে ছিলাম যে হাতে ডিম ছিলো সেটাও মনে ছিল না। রাস্তার ইলেক্ট্রিকের খাম্বার সাথে খেলাম ধাক্কা। রাস্তার লোকজন হাসছিলো। আমিও দাঁত বের করে হাসি দিলাম যেন আমার কোনো লজ্জাই নেই।
মামনি এসে গেছি।দরজা খোলো। 
ব্যাগটা দিয়েই ঘরে গেলাম। মনে তৃপ্তি, এই প্রথম কোন ভুল না করে কাজ করলাম। একটু পরেই মামনির চিৎকার। 
=এই মেয়ে আমাকে শান্তি দিল না রে। জীবনেও একটা কাজ ঠিক মত করল না।
বুঝলাম যে ডিম ভেঙেছি। তখন জিভে দাঁত দিয়ে কাটা ছাড়া উপায় ছিল না। 
. আরেকদিনের ঘটনা: আমি আর আমার বান্ধবী বাস স্টান্ড এ বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। উদ্দেশ্য নীলক্ষেতে যাব, বই কিনব। তখনি এক আপু ভারী ব্যাগ নিয়ে নামছিল।ওই যে বললাম, আমি আবার মানুষের উপকার না করে থাকতে পারি না( :p) 
-আপু, আপনাকে হেল্প করব। আপনার স্যুটকেসটা অনেক ভারী। আমি হেল্প করি?
= না আপু। লাগবে না। আমি পারব।
-না না আপু, আমি হেল্প করছি।
বলেই ব্যাগটা তুলতে গেলাম। আচ্ছা, ঝামেলা কি আমি বয়ে নিয়ে বেড়াই, নাকি ঝামেলা আমার পিছনে আসে বুঝি না। স্যুটকেসটা উঠাতে যাব, তখনি গেলো হ্যান্ডেলটা গেলো খুলে। 
=আরে, তুমি কি করলে? আমার নতুন স্যুটকেস। তোমাকে কে বলল এসব করতে, উফফ।
-স্যরি আপু, আপনার এটা কেন খুলল জানি। স্যরি স্যরি।
=কিসের স্যরি?
আমার বান্ধবী সব দেখে দৌড়ে এসে আপুকে স্যরি বলল। তাড়াতাড়ি আমাকে নিয়ে ভাগলো। 
.
এই হলাম আমি। আমার মত মেয়েকে কোন ছেলে পছন্দ করবে?? এইতো সেদিন।ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের খাতা দেখাবে। আমি সেকেন্ড ইয়ার। তো তেমন কোন কাজ নেই। সব ফ্রেন্ডরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তো এক মেয়ের খাতা দেখতে এসেছিল তার ভাই। এত হ্যান্ডসাম, আর স্মার্ট ছেলে আমি জীবনেও দেখিনি। সবাই হা করে তাকিয়ে দেখছিল, যদিও সেটা হা না। অবাক অর্থে, কিন্তু আমি সত্যিই হা করে ছিলাম।ছেলেটা একটু ইতস্তত বোধ করছিল। কিন্তু ছেলেটা যে আমাকে দেখছিল সেটা খেয়াল করিনি। ব্যাপারটা বুঝলাম তখন যখন ছেলেটা আমার দিকে এগিয়ে এসে আমার মুখের নিচে চাপ দিয়ে আমার হা বন্ধ করে দিল। পুরো ঘটনাটা মাথার উপর দিয়ে গেল আমার। আর সাথে সাথে শুরু হল বন্ধু দের পচানি। এক্সট্রিম লেভেলের গাধা আমি সেটা আজকে বুঝলাম। লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিলাম। শপথ নিলাম গাধামি বন্ধ করব। এই শপথ আমি বহুবার নিয়েছি। একবারো কর্মে পরিণত করতে পারিনি। হায়, ব্যর্থতা!!
.
.
খুব বেশি গল্পের বই পরার সুযোগ হত না। কিন্তু ফাঁক পেলেই পড়তাম। আর তখন গল্পের যে চরিত্র পছন্দ হত তার মত হওয়া শুরু করে দিতাম। একবার হুমায়ুন আহমেদ স্যার এর বই পরে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে চা খাওয়ার এক্সপেরিমেন্ট করতে গেলাম। চা রেডি, বৃষ্টিও রেডি। সমস্যা হচ্ছে চা নিয়ে ছাদে যাব, কিন্তু যেতে পারছি না। ভারী আজব তো!! আমি যতই চেস্টা করছি যেতে পারছি না। কারন্টা হল মা পেছন থেকে কান ধরে রুমে ঢুকিয়ে দিলেন। বললেন যে, বৃষ্টিতে ভেজা নিষেধ। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। যাই হোক, বৃষ্টির পানি একটা বাটিতে ধরে রেখেছি। সুযোগ বুঝে টেস্ট করব। 
তারপর সেদিন আর টেস্ট করা হয়নি, ভুলে গিয়েছিলাম। পরদিন সকালে চা বানিয়ে তার মধ্যে বৃষ্টির পানি মিশিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে খুব ভাব নিয়ে খেতে যাব.....
-ওয়্যাক থু!! ছি ছি... ইয়াক, কি বাজে স্বাদ রে বাবা। হুরর, জীবনেও এসব আর করব না।
=ওই কে রে? গায়ে চা ফেলল??
আবার ঝামেলা পাকালাম। তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেটা যার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম।
 স্যরি স্যরি, বুঝতে পারিনি।
=বাসায় কি ওয়াশরুম নাই নাকি যে মানুষের গায়ে ফেলতে হবে।
- থাকবে না কেন? আমার ওয়াশরুম সবচেয়ে সুন্দর। বাবা সব বিদেশ থেকে আনিয়েছে। পারলে আমি ওয়াশরুমেই সারাদিন কাটাতে রাজি।
= ওই মেয়ে, মাথায় সিট আছে নাকি। কি বল এসব। ভার্সিটি তে যাওয়ার জন্য বের হলাম, দিল সব নস্ট করে। ধুরর,যত্তসব পাগলের পাল্লায় পরলাম।
বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেল। চিনতে পারেনি আমাকে মনে হয়। 
এরপর অনেক দিন হয়ে গেছে। প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম সব, কে জানত আবারও এমন ঝামেলা হবে তাও আবার ওই ছেলেটার সাথেই। 
.
সামনে এক্সাম তাই লাইব্রেরীতে গিয়েছিলাম। একসাথে অনেক বই নেয়ার আইডিয়া আমার মাথাতেই আসবে। যা হওয়ার তাই হল সব বই পড়ে গেলো। একটা বই উড়ে গিয়ে পড়ল কারর মাথায় বুঝতে পেরেছিলাম।তখনো খেয়াল করিনি কার মাথায় পরল। মনে মনে বকা খাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলাম। মাথা নিচু করে বইগুলো তুলছি তখনি একজন আসলো। আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়ালাম।এক্ষনি বকা দিবে। 
=মাথায় কি তোমার বুদ্ধি শুদ্ধি কিচ্ছু নাই?? চোখ খোলো। এত ভয় পেতে হবে না।
আস্তে আস্তে চোখ খুললাম। আরে সেই ছেলেটা যে! 
=আচ্ছা তুমি এত বোকা কেন। একটু বুঝে শুনে কাজ করতে পারো না? ব্লা ব্লা........
আমি কিচ্ছু শুনছিলাম না। আবারো সেই হা।
= উফফ, আচ্ছা তুমি আমাকে দেখলে হা করে থাকো কেন?
- মানে, আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন? তাহলে সেদিন আমাকে চিনলেন না যে?
= আমি চিনেছিলাম ঠিকই।কিন্তু না চেনার ভান করছিলাম।
- ও আচ্ছা।
বইগুলো নিয়ে আমরা একই টেবিলে বসলাম। বাহ, কি সুন্দর লাগছে দেখতে। 
= ওই আবার কি সমস্যা? 
- আমি আবার কি করলাম। আমি শুধু হা করে তাকিয়ে আছি।দেখুন, কি সুন্দর হা! হিহিহি
= দেখো, মেজাজ গরম করাবা না। উফ, আল্লাহ। এই মেয়ের সাথে বারবার কেন দেখা হয়।
.
.
এবার আমি ঠিক করেই ফেলেছি যেভাবেই হোক ছেলেটার সামনে আর পড়বো না।হাহ, ছেলেটা ভাবে কি নিজেকে? শাহরুখ খান!! নিজের চেহারা মনে হয় আয়নায় দেখেনি।ধুরর।
.
.
কপাল, সবই কপাল! খুব সকালে বের হলাম একদিন। বের হবই বা না কেন সেদিন পহেলা ফাল্গুন। বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরির প্ল্যান ছিল। হ্যাটস অফ মাই মামনি। এত্ত সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দেয়ার জন্য। বন্ধুদের বিশেষ অনুরোধ আজ যেন কোন ঝামেলা না বাধাই। কিন্তু আমি তো আমিই। আমার বান্ধবী ইভা আসবে গাড়ি নিয়ে। নিচে ওয়েট করছিলাম। উফফ আপদ! আবার সেই ছেলেটা। জানি না কি করেছি, আমাকে দেখলেই হাসে। 
=হাহাহা, তুমি আর শাড়ি! আজিব কম্বিনেশন। হাহাহা।
এর মধ্যে আজিব এর কি আছে।
= হুম আজিবই তো! আরে! 
 কি?
=উম, মোটেও ভাল লাগছে না তোমাকে দেখতে। মনে হচ্ছে, একটা পেত্নি শাড়ি পরে আছে। হাহাহাহা!
হিহি, খুব ভাল হয়েছে। আপনার কাছ থেকে এর চেয়ে ভাল কিছু আশাও করি না।মুডাটাই খারাপ করে দিল।আপনি থাকুন, আমি চললাম।
হনহন করে হেটে যাচ্ছিলাম। আবারও পেছন থেকে ডাকল।
=অর্না, অর্না শোনো। তোমার শাড়ি!
 হ্যা হ্যা জানি। এবার বলবেন আমার শাড়িও আমার মতই।
পেছনে না ফিরেই চলতে চলতে কথাগুলা বলছিলাম।শাড়িটা যে একটা রিক্সার সাথে বেধে যাচ্ছিলো সেটা খেয়াল করিনি। আমি এক্ষনি পড়ে যাব। পেছন থেকে কে যেন ধরে ফেলল।
=কতক্ষন ধরে বলছি থামতে। শুনো না? কান নস্ট নাকি? এক্ষনি একটা accident হচ্ছিল। এত গাধা একটা মেয়ে কি করে হতে পারে? 
আমি ওর মুখে গাধা শুনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। এক দৌড়ে বাসায় চলে গেলাম।ইভা এসেছিলো, কিন্তু আর বের হইনি।বারান্দায় একা দাঁড়িয়ে ছিলাম।হঠাৎ দেখি ছেলেটার গাড়ি আমার বাসার সামনে এসে থামলো। নিচে দাঁড়িয়েই আমাকে বলছে
=জানো অর্না। একটা মেয়েকে আমার খুব ভাল লাগে।
তো আমি কি করব।
= না মানে মেয়েটা তোমার মত। লুক আলাইক।
 ভাল হইসে।
=তোমার মত পেত্নি। তোমার মত গাধা।
-মানে??
= আরে এইতো সকালবেলায় ও মেয়েটাকে দেখলাম। শাড়ি পরেছিল। রিক্সার সাথে বেধে পড়েও যাচ্ছিলো। 
-কিইহ?
=হ্যাঁ, ঠিকই তো বললাম। মেয়েটা হা করে তাকিয়ে থাকতে খুব পছন্দ করে। স্পেশালি আমার দিকে। 
আমার আবারো ওর কথা মাথার উপর দিয়ে গেলো। একটাই কথা মনে হচ্ছিল, হি লাইকস মি! 
=দেখো, বেশি হা করে থেকো না এখন। একটু পর সন্ধ্যা হবে। মশা মাছি ঢুকবে মুখে।
আমি এটা শুনে না হেসে থাকতে পারলাম না। 
.
আমি এখনও গাধা আছি। আমার সব ঝামেলার শিকার হয় ছেলেটা। কি করবো, ঝামেলা করতে ভালবাসি। হিহিহি।
23 December, 2015
গাধা টাইপের মেয়ে
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
 
No comments:
Post a Comment