19 January, 2016

চল বৃষ্টিতে ভিজি…

চল বৃষ্টিতে ভিজি…
ভিজলাম। ভিজে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে আসলাম। নিজেকে দারোয়ান মনে হচ্ছে। প্রথম শ্রেণীর বড়লোকদের বাড়ির ‍দার   । এদের সচরাচর ঝিমাতে দেখা যায়না। সবসময় এরা সতর্ক অবস্থানে থাকে। আর ড্রাইভাররা থাকে চা সিগারেট এবং পত্রিকা নিয়ে ব্যস্ত। বাড়ির মালিক যখন ভেতর থেকে বের হয়, তখন দারোয়ান গেট খুলে দৌড়ে গাড়ির সামনে যায়। মালিক গাড়ির সামনে চলে এলেই সে স্যালুট দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে দেয়।
স্যালুটের অপব্যবহার নিয়ে দেশে কোনো আইন নেই। অতএব, যাকে যখন খুশি দুচারটা স্যালুট দেয়াই যায়…
সেদিন বুধবার ছিলো হয়ত…
পান্হপথ, বসুন্ধরা সিটির সামনে সিড়িতে দাঁড়িয়ে আছি। সন্ধ্যা সাতটার মত হবে। পুরো শপিংমল বন্ধ। শুধু সিনেপ্লেক্সটা খোলা। একজনকে দেখতে এসে পুরো দেড়ঘন্টার একটা মুভিই দেখে ফেলেছি। বাইরে ঝুম বৃষ্টি। রাস্তার ওপাড়ে একটার পর একটা ট্রান্সমিটারের সার্কিট ব্লাস্ট হচ্ছে। দেখতে ভালোই লাগছে। পাশেরজন নীরব…
এসময় কার কথা মনে পড়তে পারে, তা আমি বুঝি। আমারো বৃষ্টি দেখলে কোনো একজনের কথা মনে হয়। মানবজাতির অলিখিত ধর্ম…
… চল্ বৃষ্টিতে ভিজি !
পাশের জন নীরব। আমি স্ট্রীটলাইটের দিকে তাকালাম। এটা অসহায়ত্বের চিহ্ন। অসহায় হলে মানুষ লাইটপোস্টের প্রেমে পড়ে। নিয়ন আলোয় রাস্তার পিচ দেখে। আমিও দেখার চেষ্টা করলাম। পাশেরজন অসহায়ত্বের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুখ খুললো…
” চল ! “
শপিংমলের সামনের ইয়ার্ড পেরিয়ে তাকে ট্যাক্সি ক্যাবে উঠিয়ে দেয়ার আগপর্যন্ত মাত্র দুমিনিট সময় পেলাম। বৃষ্টিতে ভেজার ! এই দুমিনিট, আমার দেখা জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলোর একটা বলা যেতে পারে। অবশ্য না বললেও লস নেই। গুরুত্বহীন টপিক…
ওকে ক্যাবে উঠিয়ে দিয়ে আমি আমার পথে হাঁটা ধরলাম। বৃষ্টি চা খেতে ইচ্ছে হলো। চা খেতে গিয়ে দেখলাম, পকেটে টাকা নেই। সিনেপ্লেক্সের টিকিটের সাথে টাকাও ফেলে দিয়ে এসেছি !
পান্থপথ মোড় থেকে হাঁটা শুরু করলাম। মানবশূন্য গাড় অন্ধকার রাস্তা। কুকুরও দেখা যাচ্ছেনা আশেপাশে। রমনা পর্যন্ত এসে হাপিয়ে উঠলাম। প্রিয়াংকা কি ঠিকমত বাসায় গিয়ে পৌঁছেছে? এতক্ষণে তো অবশ্যই চলে যাবার কথা ! পকেট থেকে ফোন বের করে দেখলাম, বৃষ্টির পানিতে সে মারা গেছে। একমিনিট নীরবতা পালন করে আবারো হাঁটা ধরলাম…
‘চল বৃষ্টিতে ভিজি…’
এইপ্রথম নিজের বলা কোনো একটা সাধারণ কথা নিজের কাছেই এত ভালো লাগছে। হাঁটছি আর মনে মনে বলছি, চল বৃষ্টিতে ভিজি !
রাত এগারোটা,
চল বৃষ্টিতে ভিজি…
রাত সাড়ে এগারোটা,
ফোন অন হচ্ছেনা। সে বাসায় পৌঁছালো কিনা, খোঁজ নেয়ার কোনো উপায় নেই। আমি ডিম ভাজা নিয়ে ব্যস্ত হবার কথা ভাবছি। কারো প্রতি দুর্বল হতে ইচ্ছে করছে না…
রাত ১২:০০ টা…
ডিম ভেঙ্গে ফ্রাইপেনে দিয়ে রেখেছি। চুলায় আগুন জ্বালানোর কথা মনে ছিলোনা। আমি বসে বসে আলু কাটছি। আলুর খোসা ছাড়াতে ছাড়াতে বলছি, ভা চল বৃষ্টিতে ভিজি ! চল বৃষ্টিতে ভিজি !
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। আমি একটার পর একটা আলু কেটে যাচ্ছি। বৃষ্টির শব্দ শুনে বারবার কয়েকঘন্টা পেছনে ফিরে যাচ্ছিলাম। মনে হচ্ছিলো, আমি মাত্র দুমিনিট যাবৎ আলু কাটছি !

No comments:

Post a Comment