কিছুদিন আগে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরছিলাম। ঘরে বউ
একা। ভাবলাম কিছু সিংগারা পিয়াজু নিয়ে যাই। টোনাটুনি
দু'জন মিলে সিংগারা পিয়াজু দিয়ে সন্ধ্যাটা চাবাবো
এরপরে গিলে খাব গরম গরম চায়ে।
মোড়ের দোকান থেকে সিংগারা পিয়াজু কিনে
ফিরছি, এমন সময় হঠাৎ ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। আবার ঢুকে
পরলাম দোকানে। হঠাৎ মনে হল বউয়ের জন্য
এক ঠোংগা বৃষ্টি নিয়ে যাই। দোকানদারের কাছ
থেকে একটা কাগজের ঠোংগা চেয়ে নিলাম।
বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নেমে পরলাম রাস্তায়।
এক হাতে সিংগারা পিয়াজু অন্য হাতে খালি ঠোংগা। মিনিট
দুয়েক পরেই হঠাৎ বৃষ্টি থেমে গেল। কাগজের
ঠোংগার খোলা মুখ দিয়ে কিছু বৃষ্টি ভিতরে
গেছে কিন্তু জমে থাকতে পারনি- কাগজ সব বৃষ্টি
চুষে নিয়েছে।
বাসার সিঁড়ি দিয়ে উঠছি আর ভাবছি বৃষ্টির ঠোংগাটা কি
ফেলে দিবো না নিয়ে যাবো। ভাবতে ভাবতে
কখন যে দরজায় এসে কলিংবেল টিপেছি নিজেও
বুঝতে পারিনি। দরজা খুলে ভেঁজা শরীরে
দাঁড়িয়ে আছে বউ। মিটি মিটি হাসছে- আমার বুকটা ছ্যাৎ
করে উঠলো। এ কি আমার বউ- এতো সুন্দর
লাগছে কেনো ওকে।
ঘরের ভিতর ঢুকতেই বউ বলল- "একটু আগে বৃষ্টি
হল না তখন ভিঁজেছি। আজকের বৃষ্টিটা অনেক পচা
আমাকে ঠিক মতো ভিঁজতেও দিলোনা।"
অপলক তাকিয়ে আছি বউয়ের দিকে। বৃষ্টি কি
মেয়েদের সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেয়। বউ আমার হাত
থেকে সিংগারা পিয়াজুর ঠোংগাটা নিতে নিতে বলল-
"কি হইছে মশাই আগে কখনো বউ কে
দেখেন নাই..... এই কি হইছে এইভাবে তাকাই
আছো কেন?"
বললাম- "তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে,
অনেক।" বউ চোখটা নামিয়ে লাজুক হেসে
বলল- "তোমার জন্য একটা জিনিষ আছে।"
এই বলে বউ বেডরুমে চলে গেলো। ফিরে
এলো গ্লাস হাতে- দেখি গ্লাসের তলানিতে এই
এতোটুকু পানি। বউ অভিমানি স্বরে বলল- "আজ হঠাৎ
তোমাকে ছাড়া বৃষ্টিতে ভিঁজতে ইচ্ছে
হচ্ছিলো না। তাই ভাবলাম তোমার জন্যও এক গ্লাস
বৃষ্টি ধরে রাখি। তুমি বাসায় এলে দু'জন আবার এক
গ্লাস বৃষ্টিতে ভিঁজবো। কিন্তু দেখোনা এই
এতোটুকুন বৃষ্টি জমেছে শুধু। এইটুকু বৃষ্টি তো
তোমার চুলও ভেঁজাতে পারবে না; এক কাজ কর
খেয়ে ফেল।"
তখনো মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে আছি ওর
হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে এক ঢোকে বৃষ্টি
খেয়ে ফেললাম।
কাগজের ঠোংগাটা ওর হাতে দিয়ে বললাম- "আমিও
তোমার জন্য এক ঠোংগা বৃষ্টি আনতে
চেয়েছিলাম। কিন্তু দেখ এক ফোঁটা বৃষ্টিও জমে
নাই- কাগজ সব চুপসে খেয়েছে।"
বউ বলল- "পাগল একটা, কাগজের ঠোংগায় কেউ
বৃষ্টি ধরে।"
এই বলে আমার হাত থেকে বৃষ্টির ভেঁজা ঠোংগাটা
নিয়ে; ওর গালের উপর আলতো করে রেখে
চোখ বুজে বৃষ্টির ছোঁয়া নিলো।
এরপর থেকে আমরা কখনো একজন
আরেকজনকে ছাড়া বৃষ্টিতে ভিঁজলে বৃষ্টি ধরে
রাখি। আমি আজো কাগজের ঠোংগায় বৃষ্টি ধরি।
আমি জানি কাগজের ঠোংগায় এক ফোটা বৃষ্টিও
ধরতে পারব না- তাতে ক্ষতি নেই। আমার বউ ঠিকই
আমার জন্য এক গ্লাস বৃষ্টি হাতে আমারই
প্রতীক্ষায় থাকবে।
23 December, 2015
ভালবাসার গল্প- কাগজের ঠোঙা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
 
No comments:
Post a Comment