23 December, 2015

ভালবাসার গল্প - ক্লাস এইট & ক্লাস টেন

" আমার হাত ধরে হাটতে ভয় পাচ্ছিস?”
আমি উত্তরে নীরব হয়ে রইলাম। পারমিতা আপুকে আমার আগে থেকেই ভাল লাগতো। যখন আমি ক্লাস এইটে পড়ি তখন থেকেই আর পারমিতা আপু ক্লাস টেনে। যখন পারমিতা আপু আমাদের বাসায় আসতো তখন কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হতো হৃদয়ে। জানিনা এতাকেই প্রেম বলে কিনা, তাবে ভালো লাগতো।
আমি যখন ক্লাস নাইনে উঠি তখন আমরা একই স্যারের কাছে ব্যাচে পড়তাম। পারমিতা আপু আগে পড়তো, আমি পরে পড়তাম। পারমিতা আপু পড়া শেষ করেও আমার জন্য বসে থাকতো। আমাদের বাসা একই গ্রামে ছিল। প্রথমে মনে করতাম পারমিতা আপু একা যেতে ভয় পান, আর আমাদের বাসা এক গ্রামে বলেই তিনি আমার জন্য অপেক্ষা করেন।
পারমিতা আপু আবার জিজ্ঞেস করলেন,
- কিরে আমার হাত ধরে হাঁটতে ভয় লাগছে?
- না আপু।
- এই এত আপু আপু করবি না তো সবসময়, ভালো লাগেনা।
- সেকি তুমি তো আমার থেকে বয়সে বড়।
- তো তাতে কি হয়েছে।
- তাহলে কি বলে ডাকবো?
- নাম ধরে ডাকবি। পারমিতা বলে ডাকবি। কি পারবি না?
- দেখি …
- দেখিতেখির কিছু নেই ডাক পারমিতা বলে ডাক।
- আপু তুমি জর করে আমায় ডাকাতে পারবে না। যেদিন ডাক আসবে ভেতর থেকেই আসবে।
- ওরে সেয়ানা। হ্যাঁরে তোর আমাকে ভালো লাগে?
- হ্যাঁ তুমি তো ভালো মেয়ে। তোমাকে ভালো না লাগার কি আছে?
- আরে সেই ভালো না। পছন্দ করিস আমায়? প্রেম করবি?
- আপু তুমি না। যাও এখান থেকে যতসব আজাইরা আলাপ।
পারমিতা আপু রেগে জোর করে তার দুই হাট দিয়ে আমার কপালে ধরল। তারপর আমি আমার জীবনের প্রথম চুম্বনের স্বাদ পাই।
এরপর পারমিতা আপুর সাথে আমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। একসাথে দুজন টিউশানি ফাঁকি দিয়ে রিক্সায় ঘোরা। যাওয়া, ফুচকা খাওয়া, একসাথে বৃষ্টিতে ভেজা, সিনেমা দেখা সবই হতে থাকে। কিন্তু এত কিছুর পরও আমি তাকে পারমিতা আপু থেকে পারমিতায় নামতে পারিনি।
একদিন টিউশানি এসে দেখি পারমিতা আপু আসেনি। আমি এক্তু চিন্তায় পরে গেলাম। কারন আমরা দুজন দুজনের প্রতি এমন আসক্ত হয়ে পরেছিলাম যে শুক্রবারেও এক্সট্রা ক্লাস বলে বেরিয়ে আসতাম। আমি সেদিন গেলাম পারমিতা আপুর বাসায়। গিয়ে দেখলাম আপু বাসায় নেই। পুকুর পারে একা বসে আছে।
- আপু পড়তে যাওনি কেন?
- আজ আমায় দেখতে এসেছিল।
- কে?
- সামনের শুক্রবার আমার বিয়ে।
- আসলেই আপু?
- হ্যাঁরে তোর মধ্যে সাহস আছে? আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবি?
- আপু এ তুমি কি বলছো?
- তোরা পুরুষ মানুষরা কখনই নারীর মন বুঝলি না।
পারমিতা আপুর সাথে এর পর আর কখনো দেখা হয়নি। আর কথা বলতে ইচ্ছাও হয়নি। আমার মনের বিষাদের মেঘ, সে বর্ষণের আগে কিছুই বলতে পারবে না। অবশেষে সে বর্ষণ এলো। পারমিতা আপুকে বিয়ের সাজে দেখে আমার মনে বিষাদের বর্ষণ বইল। তবে এ কান্না কেউ দেখেনি পারমিতা ছাড়া।
- কেঁদেছিস না?
- কই না তো?
- আমার সাথে মিথ্যে বলবি? দেখ তো আমাকে কেমন লাগছে?
- আপু আজ তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
- আজও আপু বলবি? নাম ধরে ডাকবি না একবার?
আমি সেদিন চেষ্টা করেও পারমিতা আপুকে ডাকতে পারিনি। কিন্তু আজ পারি। পারমিতা আমি ডাকছি তুমি শুনতে পাচ্ছ তো ……………

No comments:

Post a Comment