24 December, 2015

ভালবাসার গল্প ০৪

অনেক রাত।ছাদের কোণায় দারিয়ে সিগেরেট টানছে বৃত্ত,এমন সময় সিগেরেট খাওয়ার মজাই আলাদা।কখনো আকাশ কখনো রাস্তা,যেদিকে তাকায় সেদিকই ভালোলাগে এমন মুহূর্তে।এভাবেই চারপাশে তাকাচ্ছে বৃত্ত,তখনি দূরে একবাসায় চোখ আটকে যায় বৃত্তের।সেই বাসায় মুখে বই নিয়ে একপাশ থেকে আরেক পাশে হেটে পড়াশুনা করছে মেয়েটি।সেদিকে খেয়াল রেখেই কখন সিগেরেট শেষ তা টের পায়নি বৃত্ত,মুখে একটা হাসি এনে বাসায় চলে আসে।
.
পরদিন সেই সময়ে ছাদের কোণায় দারিয়ে আবার অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে সেই বাসার দিকে।আজও মেয়েটি এপাশ ওপাশ হেটে পরাশুনায় করছে।কোন ভাবেই মেয়েটির মুখ দেখতে পারছেনা।সিগেরেট শেষ করে বাসায় এসে কেমন যেনো অস্থির লাগছে বৃত্তের।রাতে শুয়েও শান্তি পাচ্ছেনা।সামান্য একটা বেপারে এমন হওয়ার কোন মানে হয়না,তাহলে এরকম অস্থির লাগছে কেনো,, এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়ে বৃত্ত।
.
সকালে ঘুম থেকে উঠেই বারান্দায় গিয়ে উকি ঝুকি পারতে থাকে,বারান্দা থেকে সেই বাসা দেখা যায় বলেই বৃত্ত মুখে হাসি এসে গেলো।
.
প্রতিটা দিন,সুযোগ পেলেই বৃত্তের দৃষ্টি থাকে সেই দূরের বাসাটিতে।এক বিকেলেও তাই করছে,হঠাত মা এসে কাধে হাত দেয়।
:এই বৃত্ত,বারান্দায় কি উকি ঝুকি পারছিস?
:কিছুনা মা।
:চল তো আমার সাথে,
:কোথায়?
:কাছেই,আমার এক বান্ধবীর বাসায় যাবো।
:না না প্লিজ মা,তোমার বান্ধবী তুমি যাও।
:যা বলেছি তাই কর,এসে যেনো দেখি তুই রেডি।
কি আর করার।মায়ের কথা মেনেই মায়ের বান্ধবীর বাসায় উপস্থিত।অনেকটা গল্পের মত বেপার বলেই বিশ্বাস হচ্ছেনা বৃত্তের।সেই মেয়ের বাসার ড্রইং রুমে বৃত্ত বসে আছে।এখানে বৃত্তের উকি ঝুকি আরো বেরে গেলো কিন্তু সেই মেয়ের দেখা পেলো না।এর মাঝে অস্থিরতা আছেই,কি অন্যরকম অনুভুতিতে নাকি অন্যকিছুতে বৃত্তের হাত ঘেমে যাচ্ছে,হাত ধুয়ার জন্যেই আন্টিকে বলে ফেললো...
:আন্টি,ওয়াশরুমটা কোথায়?
:এই ত বাবা,পাশের রুমে যাও পাবে।
পাশের রুমে গিয়ে বৃত্ত কে অন্যরকম ভালোলাগায় যেনো ঘিরে ধরলো। এই রুম তার খুব চেনা।রুমে বিশাল এক ছবি,হয়তো সেই মেয়ের।ছবি
দেখেও হতাশ বৃত্ত, এক হাত দিয়ে মুখের একপাশ ঢাকা ।মেয়েটির পুরো হাত জুরেই মেহেদী, এটা দেখেই বৃত্ত আরো পাগল হয়ে গেলো।বারান্দায় দারিয়ে গ্রিলে হাত রেখে নিজের বাসার বারান্দাটা দেখছে, কখনো ভাবেনি সে এখানে আসবে।কোন ভাবেই হাল ছারতে চায়না বৃত্ত তাই তারাতারি রুমে গিয়ে টেবিলে রাখা কগজ কলমে লিখে রেখে যায় নিজের নাম্বার,মার ডাকে আবার ফিরে যায় ড্রইংরুমে।
.
প্রান্তিকা,পড়াশুনা ভালোনালাগলেও করতে হয় এই ভেবেই সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে,আজ ও তাই।অনেক্ষন বসে পড়ার পর যখন দারিয়ে পরবে তখনি বইয়ের ফাক দিয়ে টুপ করে এক কাগজ পরে। সেখান এক নাম্বার, কিছুরই কূল কিনারা ক রতে না পেরে প্রচন্ড কৌতুহলে ফোন করে সেই নাম্বারে...
:Hello.
:Hello কে?
:আপনি ফোন দিয়েছেন আপনি বলুন কাকে চান।
:এটা কি ফায়ারসার্ভিস?
:না।
:ও ঠিক আছে।
এই বলেই কল কেটে দেয় প্রান্তিকা।কিন্তু খাতার ভিতর নাম্বার লিখার বেপারটা কোন ভাবেই হজম করতে পারেনা তাই পরদিন বিকেল আবার call দেয়..
:Hello
:আচ্ছা এটা কি Hospital?
:আপনি কি শুরু করেছেন?কাল ওতো ফোন দিয়ে এসব বলছেন।
:আমি আবার কি শুরু করলাম,শুরু করেছেন তো আপনি।
:মানে?
:এই নাম্বারটা কে যেনো আমার খাতায় লিখে রেখেছে।
: কি বলছেন এসব।।
ইয়ে মানে.........
:কে আপনি? কোথায় থাকেন?
:বৃত্ত......
শুরু হয় কথা আর কথা।
যতই দিন যায়,কৌতূহল আর ভালোলাগায় ভরে তুলে প্রান্তিকাকে।তাই দেখাপেতে চায় বৃত্তের।জোরাজুড়ি শুরু করে দেয় বৃত্তের সাথে। দেখা করার কিছু শর্ত আর নিয়ম বলে দেয় বৃত্ত।সেই ভাবেই রাজি প্রান্তিকা কারন আরালে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে বৃত্তকে।
.
আজ দেখা হবে বৃত্তের সাথে,
অজানা এক অনুভব আর ভালোলাগায় ঘিরে আছে প্রান্তিকাকে। দুপুরে শাড়ি নিয়ে বসে আছে,কোন উপায় না পেয়ে শেষে মার কাছে গেলো...
:মা,একটু শাড়িটা পরিয়ে দিবে?
:কি বেপার, শাড়ি কেনো পরবি।
:এই তো একটু ইচ্ছে করছে।
:ইচ্ছে করছে নাকি অন্য বেপার?
:না মা কিছুনা।
:আচ্ছা শোন,এইনে ছবি।এই ছেলেটাকে দেখ তো কেমন লাগে।আমার বান্ধবীর ছেলে। সব দিক দিয়ে ভালোই।
ছবি হাতে নিয়ে দেখতে থাকে প্রান্তিকা।ছেলেটার কোন দিক দিয়ে কম নয়,কিন্তু আমার সামনে রাজপুত্রকে বিয়ে করতে বললেও লাভ হবেনা,আনমনা হয়ে ভাবছে..
:কি ভাবছিস মা?শাড়িটায় দারুন লাগছে তোকে।
:হুম।
:একটা ছবি তুলে রাখিস।বিয়েরখোজ আসলে এই ছবি ই দিবো।
:উফ সব সময় বিয়ে আর বিয়ে।এই ধর ছবি।আমি যাই.......
.
সেখান থেকেই সোজা ছাদে এসে পরে প্রান্তিকা।বৃত্তের ফোন করে পাচ্ছেনা।ফোন অফ দেখেই চোখে পানি এসে গেলো....
আশে পাশে তাকাতেই চোখে পরলো চকলেটের বক্স, তার উপরেই চিঠি।চিঠিতে লিখা,
"আমি তোমায় ভালোবাসি"।
এসব এখানে কিভাবে এলো, বৃত্ত যদি হয় তাহলে কিভাবে এলো এখানে,ভাবতে ভাবতেই সারা ছাদ খুজে দেখলো। নাহ কেউ নেই,হাত ঘেমে যাচ্ছে। কৌতূহল আর অস্থিরতায় আরো বেশি কান্না পাচ্ছে প্রান্তিকার। নাহ রাত হয়ে এলো, বৃত্ত এলোনা।বৃত্ত কি চায়,কেনো এমন করলো ভাবতে ভাবতেই বাসায় এসে পড়ে,তখনি তার মার ডাক....
:এই প্রান্তিকা,এদিকে আয়।
:হুম।
:চোখ ফুলেছিস কেনো?এই দেখ আমার ছোট কালের বান্ধবী এসেছে।
ভিজা চোখেই হাসি দেয়ার বৃথা চেষ্টা করছে প্রান্তিকা,বান্ধবীর সেই ছবির ওলা ছেলেকেও এনেছে।বৃত্ত আসেনি
কিন্তু ওর মতই এক ছেলে নীল পাঞ্জাবী পরে আছে তা ভেবেই আর দারিয়ে থাকতে পারছেনা।মনে হচ্ছে এখনি কেদে দিবে তারপর চেপে চুপে দারিয়ে আছে প্রান্তিকা।
:এই প্রান্তিকা,তোর কি হয়েছে।
:কিছুনা মা।
: যা তো মা,বৃত্তকে নিয়ে যা তোর রুমে। আমরা বান্ধবীমিলে একটু
দরকারি কথা বলি।আজই সব ফাইনাল করি।
বৃত্তের নাম শুনে আর কিছুই বুঝার বাকি থাকেনা প্রান্তিকার,বারান্দায় গ্রিলে হাত রেখে ২জন রাতের জোছনা আকাশ উপভোগ করে।

No comments:

Post a Comment